ঢাকা:-
দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতে চেয়েছিলেন সাহেদ মিয়া। তিন মাসের মধ্যে বিদেশে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানব পাচারকারী একটি চক্র তার কাছ থেকে এক বছরে কয়েক দফায় ১২ লাখ টাকাও হাতিয়ে নেয়।
এরপর চক্রটি নানান টাল-বাহানা করে অবশেষে ভিসা সংক্রান্ত কাজের কথা বলে সিলেট থেকে ঢাকায় এনে পরিকল্পিতভাবে সাহেদকে হত্যা করে বলে অভিযোগ তার পরিবারের।
পুলিশ বলছে, সাহেদের মাথায় তালা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। এরপরে মরদেহ মুগদার একটি পরিত্যক্ত বাড়ির গর্তের মধ্যে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। বিদেশে পাঠানোর প্রতারণা ও আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কারণে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ২২ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণ মুগদা থানা এলাকার ব্যাংক কলোনির সিরাজুল ইসলামের পরিত্যক্ত খালি প্লটের একটি গর্ত থেকে সাহেদ মিয়ার (৩৪) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনার পরদিন রোববার (২৩ জুলাই) নিহতের ছোট ভাই শামীম মিয়া বাদী হয়ে মুগদা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-৩৪।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় পল্টন থেকে মানব পাচারকারী চক্রের দুই জন আশরাফুল ও আনোয়ারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন সোমবার (২৪ জুলাই) আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেককে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ছয়জন মিলে এই আদম ব্যাপারী চক্রটি পরিচালনা করে আসছিলেন। দুই জনকে গ্রেফতার করা হলেও চার আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
রিমান্ডের তৃতীয় দিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আশরাফুল ও আনোয়ার জানান, মুগদার ব্যাংক কলোনি এলাকায় একটি ছয়তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় তারা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সেখানে শাহীন, চয়ন ও আমির থাকতেন। বিদেশে লোক পাঠানোর জন্য প্রায় সময় এই বাসাতেই লোক ওঠাতেন তারা। সাহেদকেও বেশ কয়েকবার এই বাসায় আনা হয়েছে।
মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক বলেন, সকল বিষয় সামনে রেখেই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। এই ঘটনায় গ্রেফতার দুই আসামি রিমান্ডে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তবে হত্যার বিষয়টি এখনও কেউ স্বীকার করেননি।
ওসি আরও বলেন, আদম ব্যাপারী চক্রের আরও বেশ কয়েকজন আসামির নামও আমরা পেয়েছি। তাদের গ্রেফতার করা গেলে হত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
নিহত সাহেদ সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার মোহাম্মদপুরের শুড়িগাঁও গ্রামের মো. আকলিছ মিয়ার ছেলে। পরিবারের চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সাহেদ ৪র্থ। তার বড় ভাই সেলিম মিয়া ও শাহীন মিয়া আফ্রিকায় থাকেন এবং ছোট বোন লন্ডনে থাকেন।
এদিকে, ছেলে হারানোর শোকে কাতর মা সিতারা বেগম। দুই চোখ বেয়ে ঝড়ছে শোকের অশ্রুধারা। ছেলের হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানান তিনি।
নিহত সাহেদ মিয়ার দুলাভাই মো. জাকির হোসনে বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সাহেদ বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো। বিদেশে যাওয়ার জন্যই পাশের বাড়ির শাহীনের মাধ্যমে এই চক্রের কাছে টাকা জমা দেয় সাহেদ। তিন মাসে সাহেদকে দক্ষিণ আফ্রিকা পাঠানো হবে বলে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকাও নিয়েছে। কিন্তু এক বছর যাবত নানান কথা বলে সাহেদকে ঘুরাচ্ছিল চক্রটি।
তিনি বলেন, গত ১৬ জুলাই সিলেট থেকে সাহেদকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সপ্তাহ পর ২২ জুলাই রাতে মোবাইলে আদম ব্যাপারীরা জানায় যে, সাহেদ ছয় তলার ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে। এরপর থেকে আদম ব্যাপারী শাহীনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাচ্ছি।
নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, সাদা হাফ হাতা চেক শার্ট ও একটি চেকের লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় সাহেদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের মাথার পেছনে বাম পাশে কাটা জখম ও পিঠে ছোট ছোট ফোলা রক্ত জমাটের দাগ রয়েছে। তার দুই কান দিয়ে রক্ত বের হওয়ার চিহ্ন ছিল।
সূত্র:- বাংলা নিউজ
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply